কবিতাপাঠ

( অরি মিশোর একটি কবিতা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে লেখা)


বায়োডাটা সঙ্গে নিয়েই এসেছি শুনে বলল--
ও ... তো এখন একটু ব্যস্ত আছে অফিসের কাজে বেরিয়েছে। ফিরতে ফিরতে বিকেল হয়ে যাবে। তু ... আপনি বরং কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে পারণে; যদি আপনার বিশেষ কোন কাজ না থাকে (এ যুগে বেকার কবিদের কোন কাজ থাকে না বলার মতন, তবুও এ কথা কেন বলল? খোটা দিল!)।

নরম সোফার গদিতে ধীরে ধীরে মিলিয়ে যেতে যেতে মনে হল পাতালের রাস্তাটা এখান থেকেই শুরু।
একটা উজ্জ্বল কাঁচের গ্লাসে কমলা বর্ণের তরলটা ঘোলাটে দৃষ্টি নিয়ে তারই দিকে এগিয়ে আসছিল। মনে হোল সকালের দুটো পোড়া রুটি আর পেঁয়াজ এখুনি বাইরে বেরিয়ে আসবে।
তারপর, একটা কণ্ঠস্বর ধাক্কা মেরে বলে উঠল -- এখনো কবিতা লেখ? উত্তরের প্রত্যাশা না রেখেই আবারও; উনি আবার কবিতা একদম পছন্দ করেন না (নিস্তব্ধতা বোধ হয়ে তরোয়ালের চেয়েও ধারালো হয়) ।
এতো ক্ষণ বসে না থেকে চলো বাড়িটা ঘুরিয়ে দেখাই। এমনিতেই এই সময়টা কিছুতেই কাটতে চায় না। হতচ্ছাড়া চাকর গুলোও ভাত ঘুম লাগায়।

একে একে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে চলি। ঘরের পর ঘর। থরে থরে সাজানো বসা, শোয়া, হাঁটা, পড়া, লেখা, খাওয়া ...। নিজেকে বড় অস্তিত্বহীন মনে হয় এতো উজ্জ্বলে। তোমার নাকের কোনায় মুক্তোর মত জমে উঠেছে ঘাম। চলো একটু বসি; সামনেই আমার শোয়ার ঘর।

আরে ওখানে দারিয়ে কেন? বিছানায় এসে বসো। এখনো অনেকটা সময় বাকি আছে অপেক্ষার। কেউ দেখলে বলবে গেস্ট কে দার করিয়ে রেখে নিজে আরাম করছে। নতুন কি লিখছ? শোনাবে না (লেখার খাতা গুলো আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার পর; কলমে আর কালির দরকার হয় না)।

শব্দ দের গুছিয়ে নিয়ে বসলাম মখমলের চাদরে। জড়সড়।

আরে এতো সংকোচ কেন? আগে তো বেশ চটপটই কবিতা শোনাতে। দাঁড়াও আমি বরং একটু হালকা পোশাক পরি, আঁটোসাটো পোশাকে কবিতা শুনতে অস্বস্তি হয়। শোনো; ব্লাউজের হুকটা একটু খুলে দেবে। বিয়ের পর একটু মোটা হয়ে গেছি। ভয় পেওনা, খুব সহজ কাজ। উনি তো এক ঝটকায় খুলে দেন।

আরে, এখনো শুরু করলে না কবিতা। এতো দূরে কেন? আমিই কাছে বসছি, কবিতা শোনার দায়টা যখন আমারই।  তুমি চিন্তা করোনা উনি এলেই আমি তোমাকে ওনার কাছে নিয়ে যাব, অনুরোধ করবো যেন তোমার চাকরিটা হয়। দেখো ঠিক হবে আমার অনুরোধ উনি ফেলতেই পারবেন না। এখনো হাতে ঘণ্টা দুয়েক বাকি। দু ঘণ্টা ধরে বলার মতন কবিতা আছে কি তোমার কাছে? সত্যি বলতে, কবিতার প্রতি আমার আগ্রহটা কমই মনে হচ্ছে। বরঞ্চ তোমাকে একটা গোপন জিনিষ দেখাই। দেখি একজন কবি এ বিষয়ে ঠিক কি কি জানে। এই দেখো -- উন্মুক্ত স্তনের নিচে লম্বা কালচে দুটো দাগ। জমাট বাঁধা রক্তে, বীভৎস কুৎসিত লাগছে। চোখে সরিয়ে নিতে দেখেই -- আরও অনেক আছে, সাড়া শরীর জুড়ে। ছুঁয়ে দেখবে নাকি? ছুঁলে ব্যথা হয়; তবুও তুমি ছুঁয়ে দেখ কবি। এটা কবিতার চেয়ে, আলোচনার চেয়ে অনেক বেশী দরকারি।

সংকোচ (অনেক দিন হাতে হাত দিয়ে ঘুরেছি। অনেক দিন কাঁধে মাথা রেখে কেটে গেছে সময়। কিন্তু ঈশ্বরীয় শরীর ...)।
সে ভীরু হাতে ছুঁয়ে দিলো ক্ষত। তার হাত কাপতে লাগলো। সে সরিয়ে নিলো হাত।

আরে সরিয়ে নিলে কেনো? উনি তো চাবুক দিয়ে রক্ত বার করে আনেন প্রতিবার; আমি টু শব্দ করি না। আবার কি ভাবছো! অন্য কাউকে এই ক্ষত গুলো দেখিয়েছি কিনা? না গো না কবি, অন্য কাউকে দেখাই নি। শুধু তুমিই দেখলে, বোকারাম। এই বার কবিতা শোনাও, আরও কাছে এসে। প্রতিটি শব্দ যেন আমি বুকের কাছে শুনতে পাই-- বুকে টেনে নিলো সে।

আদর করতে করতে সে বলল --কবি; এখনো কবিতা পড়ো নইলে আমারা ভুলে যাব আমারা এখানে কেন এসেছি।

ঠিক সেই মুহুতে ভাগ্যবিধাতা ঘরে প্রবেশ করলেন।




মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ